পাকা তাল খাওয়ার উপকারিতা
তালের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি তালের পিঠা পায়েস কেক খাওয়া হয় আর এগুলো খেতে ভীষণ মজা হয়। আমাদের মাঝে অনেক মানুষ আছে যারা পাকা তাল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাই। এছাড়াও তালের রস খাওয়ার উপকারিতা কি এগুলো সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা থাকে না। আপনি যদি আমাদের পুরো পোস্টটা পড়েন তাহলে তাল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
তালের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ যেমন ভিটামিন সি শর্করা ও খনিজ এর মতো বিভিন্ন উৎস। এটি খেতেও যেমন সুস্বাদু এর পুষ্টিগুনো অনেক বেশি। এক কথায় বলা যায় ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামের উৎস কালকে বলা হয়।
ভূমিকা
চলছে ভাদর মাস আর ভাদর মাস মানেই আমরা জানি যে পাকা তালের মৌসুম। অন্য ফলের মতন তালে রয়েছে বেশ উপকারী ও পুষ্টিগুণ মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এছাড়াও তাল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু পিঠা খাদ্য তৈরি করা হয় এটি সবচেয়ে বেশি গ্রাম বাংলায় দেখা যায়। বাঙ্গালীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে একটি হচ্ছে তাল আর এই সুস্বাদু ফলটি কচি অবস্থায় শাঁস হিসাবে খাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন পাকা তালের রসে ভিটামিন বি কমপ্লেস থাকে শরীরে ভিটামিন বি এর ঘাটতি পূরণ করে। এতে থাকা ক্যালসিয়াম ফসফরাস আমাদের হার ও দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করে এছাড়াও যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কৃমির সমস্যা আছে তারা মৌসুমে তাল খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাহলে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তাল খেলে বমি ভাব দূর হয় পুরনো কাশি ভালো হয়
পাকা তাল খাওয়ার উপকারিতা
ভাদ্র মাসে পাকা তাল পাওয়া যায় আর পাকা তালের মৌসুম বলতে আমরা ভাদ্র মাসকেই চিনি। তাল হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি পরিচিত নাম। ভাদ্র মাস এলেই বাংলার ঘরে ঘরে দেখা যায় তালের পিঠা তালের পায়ে সাধারণত এইসব দেখা যায় গ্রামের দিকে। আর তালের পিঠা বানানোর রেসিপি গ্রামে দেখা যায়। শ্রাবণের পর যখন ভাদ্র মাস আসে তখনই গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে দেখা যায় তালের রস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা পায়েস তৈরি করা হয়।
তাল হচ্ছে আমাদের একটি দেশীয় ফল তাল পাকলে তার গন্ধটা শুনলে মন এমনিতে ভালো হয়ে যায়। তালে থাকে ভিটামিন বি ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ ছাড়াও থাকে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, খনিজ, জিংক ও আয়রন আর তার সঙ্গে রয়েছে এন্টিঅক্সিজেন । সব মিলিয়ে বলা যায় যে এই ফলে রয়েছে বিভিন্ন রকমের পুষ্টিগুণ। তালের এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকারে আসে।
এটি আমাদের শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য রক্ষাও করে স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে তাল সবচেয়ে বেশি কাজ করে। আর তালে থাকা ভিটামিন বি সবচেয়ে বড় উপকারিতা ভিটামিন অভাজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। তাল আর ভিটামিন বি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে কাজ করে।
এছাড়াও আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার করে। সেজন্য আপনি চাইলে নিয়মিত তাল খেতে পারেন তাল হচ্ছে একটি উপকারী ফল। পাকা তালে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য তাল হচ্ছে একটি উপকারী ফল হতে পারে তাহলে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। আপনি যদি তালের বড়া তৈরি করে খান তাহলে এতে প্রচুর পরিমাণে তেল যোগ হয় সে জন্য শরীরে ক্ষতি হতে পারে।
যেমন এ ধরনের খাবার খেলে বেড়ে যেতে পারে আপনার গ্যাস্ট্রিক। এছাড়া এতে থাকা তেল আপনার শরীরে আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাল দিয়ে তৈরি খাবার অতিরিক্ত চিনি যোগ করলেও বাড়তে পারে সমস্যা সেজন্য আপনাকে এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাকা তাল যেমন খাওয়া অনেক বেশি উপকারী ঠিক তেমনি যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয় তাহলে এর অপকারিতা ও রয়েছে।
তালের রস খাওয়ার উপকারিতা
গ্রীষ্মকালীন ফল হচ্ছে তাল আর এই তাল গাছের ফল থেকে পাওয়া যায় মিষ্টি রস। আর এই মিষ্টি রস রয়েছে ভিটামিন বি ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই। এছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক ও আয়রন জাতীয় বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। গ্রীষ্মকালে বাংলার মানুষের একটি সুপরিচিত খাবার হচ্ছে তালের রস যার ব্যবহার অনেক আগ থেকে হয়ে এসেছে। আর বাঙালিরা তালের রস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে যেমন তালের মিছরি পায়ে পিঠা ক্ষীর এবং তাল বড়া।
গর্ভাবস্থায় তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা
তালশাঁস খাওয়া হয় সাধারণত গ্রীষ্মকালে। গর্ববতী মহিলাদের বলা হয় তালশাঁস কিন্তু গর্ভ অবস্থায় তাল শাঁস খাওয়াকে নিরাপদ? এটা হয়তবা অনেক গর্ভবতী মহিলারা জানেনা। তাল শাঁস তামিলনাড়ু পূর্ব এশিয়া দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তালের শাঁস একটি নারিকেলের মতন দেখতে হয় খোসার রং চকচকে কালো হয়। আর এর ভেতরটা দেখতে প্রায় স্বচ্ছ জেলির মতন। আর তালশাঁসের ভেতরটা নারকেলের জলের মতো মিষ্টি জলে ভরা থাকে সেজন্যই গর্ব অবস্থায় তালশাঁস খেতে বলা হয়।
তাল শাঁস এ রয়েছে স্বাস্থ্যকর কিছু উপকারিতা এটি হজম সংক্রান্ত রোগের পক্ষে খুব ভালো। এছাড়াও নিয়মিত মলত্যাগ নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ জলীয় উপাদানের কারণে তাল শাঁস খুবই জনপ্রিয় আর এটি গ্রীষ্মকালে পাওয়া যায়। তার সাথে ক্যালরি কম থাকে কিন্তু ক্যালসিয়ামের সমৃদ্ধ থাকে। তাল শাঁসে ভিটামিন এ ই থাকে যা আমাদের চুল ত্বকের জন্য বিশেষ করে উপকারী। বমি ডায়রিয়া রোগীদের ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে তালশাঁস খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
এছাড়াও গর্ভ অবস্থায় ক্লান্তি দূর করার জন্য তাল শাস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেক সময় দেখা যায় গর্ভকালীন অবস্থায় বারবার বমি ও ক্লান্তি আসে। গর্ব অবস্থায় তাল শাঁস খেলে ক্লান্তি ও বমি এ ধরনের সমস্যা প্রশমিত করা হয়। এমনকি তালশাঁস বুকের দুধের উৎপাদন বাড়ায় পুষ্টিগুণ যোগ করে। যেসব শিশুরা বুকের দুধ খায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়।
তাল খেলে কি কাঁশি বাড়ে
মৌসুম বদলের কারণে দেখা যায় অনেক সময় শিশু থেকে বড় সবাই প্রায় ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়। আর যদি শিশুদের ঠান্ডা লাগে তাহলে চিন্তাটা একটু বেশি বেড়ে যায়। কারণ শিশুরা খাওয়া থেকে শুরু করে ঘুম সবকিছুতেই সমস্যা সৃষ্টি হয় পাশাপাশি খাওয়ার রুচিও অনেক বেশি কমে যায়। ঠান্ডা জ্বরে এই সময়ে তালমিছরি হচ্ছে সবচেয়ে ভিষণ উপকারী। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় তাল মিছরি।
তালমিছরিতে থাকে তালের রস আর এই তাল রস জ্বাল দেওয়া হয় একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তারপরে ট্রে বা কোন পাত্রে ঢালা হয়। তালমিছরিতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, অ্যামাইনো এসিড ও অ্যাসেনশিয়াল ভিটামিন রয়েছে। ভিটামিন বি ১২ পাওয়া যায় তালমিছরিতে সেজন্যে যারা নিরামিষ জাতীয় খাবার খায় তাদের জন্য তাল মিছরি খুবই উপকারী একটি উপাদান।
যাদের অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা রয়েছে তাদের জন্য উপকারী একটি উপাদান হচ্ছে তালমিছরি। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন যা বিশেষ করে নারীদের জন্য উপকারী। আয়রন রক্তের লেভেল ঠিক রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। বয়সে সঙ্গে সঙ্গে যাদের হারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেমন হাড় ক্ষয় বা হাটুতে ব্যথা এই ধরনের সমস্যায় তালমিছরি খুবই উপকারী। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম যে কারণে এটি হাড় ও দাঁত শক্ত করে তোলে।
এছাড়াও হাড়ের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। সর্দি-কাশি দূর করতে পারে এই তাল মিছরি এর রস কাশি উপশম করে ফলে ফুসফুসে কাশির সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এক টুকরো তালমিছরি আপনার সর্দিও কাশি ভালো করতে পারে। আবার দেখা যায় যে অনেকেই আছে সাইনাজ জনিত মাথা ব্যথার সমস্যা থাকে তারা যদি আদা রসের সঙ্গে তাল মিশ্রি মিশিয়ে খান তাহলে মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি পাবেন।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আপনাদের হয়তোবা এত সময় জানা হয়ে গেছে পাকা তাল খাওয়ার উপকারিতা। তালের রস খাওয়ার উপকারিতা। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে তাল হচ্ছে একটি গ্রীষ্মকালীন ফল এর অনেক বেশি উপকারিতা রয়েছে তালের রসের। এছাড়াও তাল শাঁসের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। আপনি যদি তালের মিছরি খান তাহলে মাথাব্যথা অনিদ্রা সর্দি-কাশি এগুলো দূর হয়ে যায় তালের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।
এছাড়াও তাল থেকে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার তৈরি হয় পিঠা পায়েস ও তালমিছরি। তালের রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকারে আসে এমনকি শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আপনি যদি আমাদের পুরো পোস্টটা পড়েন তাহলে অনেক বেশি উপকৃত হবেন।আজকের লেখা আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লাগে তবে প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। এবং আপনাদের যদি কোন মন্তব্য থাকে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
Setu24 নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url