ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা কিসের লক্ষণ

আমাদের মাঝে অনেকে আছে যাদের ক্রমাগত ক্ষুদা পায় কিন্তু তারা জানে না ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা কিসের লক্ষণ ও গর্ব অবস্থায় ঘন ঘন খিদে লাগার কারণ সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা থাকে না। আজকে আমরা জানাবো কেন ঘন ঘন ক্ষুধা লাগে আর সঠিক তথ্য জানতে হলে অবশ্যই আপনাকে পুরো পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুব মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন।
সাধারণত আমরা দিনে তিনবার খাবার খেয়ে থাকি যেমন ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ ও ডিনার। কিন্তু আপনার যদি খাবার পরও ক্ষুধা  লাগে তাহলে আপনার ডায়াবেটিস ডিপ্রেশন এর লক্ষণ হতে পারে।

ভূমিকা

ক্ষুধা লাগা বিষয়টা অনেক স্বাভাবিক তবে যদি দেখা যায় খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পর আপনার ক্ষুধা লাগছে তাহলে এটা মোটেও স্বাভাবিক বিষয় না এটা বিভিন্ন ধরনের রোগের লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় এটি ডায়াবেটিসের লক্ষণ হয়। আপনার যদি ডায়াবেটিস হয় তাহলে দেখা যাবে কিছুক্ষণ পর পর আপনার ক্ষুধা পাবে এবং যদি আপনি ভরা পেটেও থাকেন তার এক ঘন্টা বা আধা ঘন্টা পর আবার ক্ষুধা পাবে।

তবে এমন কিছু খাবার আছে যা খেলে আপনার ক্ষুধা অনেক বেশি কমে যাবে। যেমন ফলমূল শাক-সবজি বাদাম এসব জাতীয় খাবার যদি আপনি খান তাহলে দেখবেন আপনার পেট অনেক সময় ভরে থাকবে ক্ষুধা কম লাগবে। এছাড়াও গর্ভ অবস্থায় দেখা যায় যে কিছুক্ষণ পর পর ক্ষুধা পায় কারণ গর্ববতী মায়েদের একসাথে দুইজনার খাবার খেতে হয়। সেজন্য তাদের কিছুক্ষণ পর পর ক্ষুধা লাগে এটা অস্বাভাবিক কোন কিছু না এটা কোন সমস্যার কারণে না এটা একটি স্বাভাবিক বিষয়।

ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা কিসের লক্ষণ

সারাদিনে দেখা যায় যে নিয়ম করে খাবার পরও আমাদের অনেক সময় ক্ষুধা লাগে। যদি আপনার খাবার পরে ক্ষুধা লাগে তাহলে এর পিছনে কিছু না কিছু কারণ অবশ্যই আছে। আমাদের ক্ষুধা লাগবে বিষয়টা একদমই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি দেখা যায় দুপুরে খাবার পর যদি দেখা যায় এক ঘন্টা পর ক্ষুধা লাগছে আবার রাতে খাবার পর যদি ক্ষুধা লাগে তাহলে এটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। ক্ষুধা লাগলে অনেক সময় দেখা যায় যে মন মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায় মাথা ব্যথা করে এবং পেটের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শব্দ করে।

যদি দেখা যায় যে সব সময় আপনার ক্ষুধা লাগে তাহলে এটা স্বাভাবিক বিষয় না ।আপনার খাবারে যদি প্রোটিনের অভাব থাকে তাহলে আপনার ঘন ঘন ক্ষুধা লাগবে। সেজন্য আপনাকে অবশ্যই প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমন আমাদের শরীরে পুষ্টির যোগায় সেই সাথে সাথে অনেক সময় আমাদের পেট ভরিয়ে রাখে। প্রোটিন থেকে একটি লেপটিন নামক হরমোন উৎপাদিত হয় যা আমাদের ক্ষুধা ভাব খুব সহজে কমিয়ে দেয়।

আপনি যদি ঘন ঘন ক্ষুধা লাগার সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে উচ্চ প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন মাছ, ছোলা, বাটার, ডাল, টক দই কুমড়োর বিচ, চিংড়ি, পিনার বাটার, ও ডিম। আপনি যদি ডায়েট করার জন্য খাবার কম খান সেক্ষেত্রে যদি ক্ষুধা লাগে তাহলে এটি আরো আপনার জটিল সমস্যা তৈরি করতে পারে। ঘুম ভালো না হওয়ার কারণে অনেক সময় দেখা যায় যে আমাদের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে।

শরীরের সঠিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন আছে। শরীরকে যদি আপনি বিশ্রাম না দেন তাহলে শরীরে ঘ্রেলিন নামক হরমোন উৎপাদন হয় আর সেটি আমাদের ক্ষুদা বাড়িয়ে দেয়। একজন সুস্থ মানুষ ও পূর্ণ বয়স্ক মানুষের কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন আছে। প্রতিদিনের খাবারে যদি ফ্যাট ও ফাইবারের অভাব হয় তাহলে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগে।

খাবার তালিকায় আপনাকে অবশ্যই ফ্যাট ও ফাইবার জাতীয় খাবার রাখতে হবে। কারণ ফাইবার আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করে ও অনেক সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এইজন্য আমাদের উচিত খাবার তালিকায় ফাইবার যুক্ত খাবার রাখা যেমন অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাড্রো, ব্রুকলি, সিমের বিচি, বাদাম, ভেরি, ড্রাই ফুড, ও আপেল এগুলো হচ্ছে ফাইবার যুক্ত খাবার। এছাড়াও দেখা যায় ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা ডায়াবেটিসের লক্ষণ।

গর্ভ অবস্থায় ঘন ঘন খিদে লাগার কারণ

গর্ভ অবস্থায় শিশু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের ক্যালরি অনেক বেশি প্রয়োজন থাকে। আর শিশু যতো বড় হবে খিদে ততই বেড়ে যাবে। এছাড়াও দেখা যায় যে গর্ভ অবস্থায় দ্বিতীয় মাসে মহিলাদের ক্ষুধা অনেক বেশি বেড়ে যায়। প্রথম মাসের দিকে খেয়াল করা যায় যে দেহের প্রোজেস্টেরণের মাত্রা বাড়তে থাকে সেই কারণে দেখা যায় বমি বমি  ভাব মাথা ঘোরা এরকম সমস্যা হতে থাকে এই জন্যই ক্ষুধার মাত্রা বেড়ে যায়।

সাধারণত দেখা যায় যে বমি হওয়ার পর পেট খালি হয়ে যায়। তখন হঠাৎ করে আপনি ক্ষুধা অনুভব করবেন। গর্ভ অবস্থায় বমি হওয়ার কারণে দেহের ক্যালরি গুলো পেটের অভ্যন্তরে আপনার শিশুর বেড়ে উঠতে প্রয়োজনে আপনি ক্ষুধা বোধ করতে পারেন। গর্ভ অবস্থায় দেখা যায় যে মহিলাদের রক্তের মাত্রা উচ্চ থাকে সেগুলো বজায় রাখতে ক্যালরির প্রয়োজন হয় আর এই জন্যই তীব্র ক্ষিদে পায়। 

গর্ভ অবস্থায় দ্বিতীয় মাসে ক্ষিদা বেড়ে যায় এর কারণ হচ্ছে বৃদ্ধি প্রাপ্ত ভ্রুণ। যেটা সঠিকভাবে বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টির প্রয়োজন হয় আর সে জন্যই ক্ষুধা বেড়ে যায়। এছাড়া গর্ভ অবস্থা উচ্চ রক্ত  মাত্রা এবং গর্ভ পর্যায় হয়ে থাকা অন্যান্য প্রক্রিয়া গুলোর জন্য অনেক সময় দেখা যায় যে অতিরিক্ত ক্যালরির প্রয়োজন হয়। আর অতিরিক্ত ক্যালরির প্রয়োজন হলে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগবে।

গর্ভাবস্থায় আপনাকে খেতে হবে দুইটি মানুষের জন্য এই বিষয়টি হলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ না আপনার পেট পরিতৃপ্ত হয় তত সময় খাওয়া উচিত। গর্ভ অবস্থায় জল খাবার গুলো বেশি রাখতে পারেন। যদি অতিরিক্ত তেল মশলা জাতীয় খাবার খান ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খান তাহলে এটি আপনার ও বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ডায়াবেটিস হলে ক্ষুধা লাগে কেন

ডায়াবেটিস হচ্ছে এমন একটি সমস্যা যার ডায়াবেটিস হয় সে ব্যক্তি রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যায়। এই রোগে যদি কেউ আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। আর যাদের ডায়াবেটিকস রয়েছে তাদের একটু পরপরই ক্ষুধা লাগে। আমরা সবাই জানি ক্ষুধা একটি স্বাভাবিক জৈবিক এটি অস্বাভাবিক কিছু না। অনেকে দেখা যায় যে সকালে নাস্তা করে দুপুরে খাবার খেয়েও তার আধা ঘন্টা পর আবার ক্ষুধা লাগে।

অর্থাৎ খাবার পরে খেতে ইচ্ছা করে। বেশি বেশি খাবার পরে আরো বেশি খাবার ইচ্ছা করে এর প্রধান কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিকস হলে আপনার ক্ষুধা লাগবে আর ক্ষুধা কমানোর জন্য আপনাকে রাতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে এর কম যদি ঘুমান তাহলে আপনার ক্ষুধা তীব্র বেড়ে যাবে। এছাড়াও কম ঘুমের কারণে ওজন খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যায়। রাতে অতিরিক্ত যদি শর্করার যুক্ত খাবার খান তাহলে দেখবেন তার কিছুক্ষণ পর আবার আপনার ক্ষুধা লাগবে।

যখন আমরা একসাথে অনেকগুলো শতকরা গ্রহণ করি তখন আমাদের শরীর খুব দ্রুত তা শোষণ করে নেই তারপরে আবার ক্ষুধা লাগে। অনেক সময় দেখা যায় যে পেটে যদি অতিরিক্ত কৃমি থাকে অথবা যদি অতিরিক্ত মদ্যপান করেন মানসিক চাপে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। যেমন ডায়াবেটিস ও হাইপারথাইরয়ডিজম। এক কথায় বলা যায় যে ডায়াবেটিস থাকলে কিছুক্ষণ পরপর ক্ষুধা লাগবে। ক্ষুধা অনেক বেশি বেড়ে যাবে সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু ফল খেতে হবে তাহলে বারবার ক্ষুধা লাগবে না।

কোন খাবার খেলে ক্ষুধা কমে

অনেক সময় দেখা যায় যে অনেক রকমের খাবার আমাদের শরীরের ওজন খুব সহজে কমিয়ে দেয়। কিছু কিছু খাবার আছে যা আমাদের অনেক সময় পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। সেজন্যে দেখা যায় যে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ইচ্ছা অনেক বেশি কমে যায়। আসুন তাহলে আজকে আমরা জেনে নিব কোন খাবার খেলে ক্ষুধা কম লাগে। বিনজাতীয় খাবার যেমন মটরশুঁটির, ছোলা, সোয়াবিন এগুলো নিয়মিত খেতে পারেন।

এগুলোতে রয়েছে ফাইবার যা আমাদের হজম কাজে অনেক বেশি উপকারী। আর ফাইবার আমাদের পেট অনেক সময় পর্যন্ত ভরিয়ে রাখতে পারে। ফলে খুব তাড়াতাড়ি আপনার ক্ষুধা লাগবেনা। আপনি চাইলে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় স্যুপ রাখতে পারেন।  স্যুপ হচ্ছে অনেক একটি পুষ্টিকর খাবার। আপনি চাইলে কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেতে পারেন কম ক্যালরি যুক্ত খাবার যেমন সবজি। সবজির কোন বিকল্প নেই।

এছাড়াও দই খেতে পারেন। আপনি চাইলে দইয়ের সঙ্গে যে কোন ফল মিশিয়ে খেতে পারেন এতে অনেক সময় আপনার পেট ভরে থাকবে ক্ষুধা কম লাগবে। বাদাম হচ্ছে আমাদের হজম কাজে অনেক বেশি সাহায্য করে। আপনি বাদাম দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে পারবেন চিনা বাদাম, পেস্তা বাদাম, আখরোট খেতে পারবেন। এছাড়াও খোসাশুদ্ধে আপেল খেতে পারবেন। আপেলের খোসা না ছিলে আপনি খেতে পারবেন কারণ আপেলের খোসাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা পুণ্যবোধ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এছাড়া আপনি যদি চিবিয়ে খান তাহলে মস্তিষ্ক ভালো থাকে।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আপনি হয়তোবা এত সময় জেনে গেছেন ঘনঘন ক্ষুধা লাগা কিসের লক্ষণ গর্ভাবস্থায় ঘনঘন খেতে লাগার কারণে এছাড়াও কোন খাবার খেলে ক্ষুধা কমে যায়। ডায়াবেটিস হলে ক্ষুধা লাগে কেন বিভিন্ন ধরনের তথ্য যদি আপনাদের জানা না থাকে তবে এত সময়ে জানা হয়ে গেছে। অনেক মানুষ আছে যারা খাবার খাওয়ার পর পরে আবার দেখা যায় ক্ষুধা লাগে। এটি বিভিন্ন ধরনের রোগের লক্ষণ হতে পারে।

এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই আপনাকে প্রোটিন ও ফাইবার জাতীয় খাবার খেতে হবে। এছাড়াও রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে তাহলে ঘন ঘন খুদা লাগবে না। আজকের লেখা আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লাগে তবে প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। এবং আপনাদের কোন মন্তব্য থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।







এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Setu24 নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url