কিভাবে পাটের ভালো চারা বাছাই করা যায়
অনেকেই হয়তো বা আমাদের মাঝে জানেনা যে কিভাবে পাটের চারা বাছাই করা যায় ও কিভাবে পাটের পরিচর্যা করতে হয় আসুন তাহলে আমরা জেনে নিই। সঠিক তথ্য জানতে হলে আপনাকে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। আমাদের বাংলাদেশের অর্থকারী ফসল হচ্ছে পাট। পাট থেকে বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি হয় যেমন ব্যাগ, সুতা, পর্দা, কার্পেট ইত্যাদি আরো বিভিন্ন ধরনের জিনিস।
আমরা জানি যে পাট আমাদের অর্থকারী ফসল বাংলাদেশের। এছাড়া উৎপাদিত পাটের ৭০ ভাগ দেশে ব্যবহার করা হয় এছাড়া বাকি ৩০ ভাগ পার্ট জাত দ্রব্য হিসাবে রপ্তানি করা হয়।
ভূমিকা
পাট হচ্ছে একটি তন্ত্র জাতীয় উদ্ভিদ। পাট গাছ থেকে পাটের আঁশ সংগ্রহ করা হয় আমাদের দেশে সোনালী আশ বলা হয় পাটকে। পাট থেকে বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি হয় যেমন দড়ি, থলি, চট, সুতা সুতলি বিভিন্ন ধরনের জিনিস পাঠ থেকে তৈরি হয়। এছাড়াও পার্ট থেকে আসন কাগজ হার্ডবোর্ড কার্পেট এগুলো তৈরি হয়। পাটের জাত বিভিন্ন ধরনের হয় জমি অনুযায়ী পাটের চাষ করা হয় সাধারণত। আমাদের দেশে দুই রকমের পাট চাষ করা হয় যেমন তোষা ও দেশি দুই ধরনের পাট চাষ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে পাটের চাষ হয় অনেক বেশি। এছাড়াও পাট শাক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী। আসুন আরো বিস্তারিত জেনে নিই।
কিভাবে পাটের ভালো চারা বাছাই করা যায়
ভালো চারা মানেই ভালো গাছ আর ভালো গাছ মানেই ফলন হবে। আমাদের দেশে মূলত দুই ধরনের পাঠ চাষ করা হয়। একটা সাদা পাট আর একটা তোষা পাট। কিন্তু পাটের অনেক ভালো জাত আছে সেগুলো দেশি পাট তোষা পাট কেনাফ বিজেআরআই দেশি পাট ৫, বিজেআরআই দেশি পাট৬, বিজেআরআই দেশি পাট ৭, বিনা দেশি পাট ২ ইত্যাদি আরো বিভিন্ন ধরনের জাত। পাট আমাদের জন্য একটা অন্তগত উদ্ভিদ।কারণ পাট থেকে আমাদের দেশে অনেক কিছু করা যায় যেমন সুতা, বস্তা, ব্যাগ, কার্পেট বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি হয় পাঠের আজ থেকে।
এছাড়াও আমরা পাট থেকে পাটের শাক পায় আর সাথে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যা আমাদের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে । আসুন আমরা এবার জেনে নিই কিভাবে পাটের ভাল চারা বাছাই করা যায় সে সম্পর্কে। পাটের চারা বাছাই করতে হয়তো অনেকে জানে না। তাই আজ বলব কিভাবে পাটের চারা বাছাই করবেন আপনারা। পাটের চারা হয়না মূলত এটা বীজ থেকে পাট তৈরি হয়। সেই পাট থেকে কিছু ভালো চারা বাছাই করে বাজারে বিক্রি করা হয়। এই কারনে পাটের চারা বাছাই করা হয়। পাটের জন্য উঁচু বা মধ্য উঁচু জমি নির্বাচন করায় খুব ভালো।
পাটের বীজ অনেক ছোট হয় সেজন্য জমিতে অনেক ভালোভাবে চাষ দিতে হয়। আপনি যদি পাট চাষের জন্য অনেক বেশি খরচ কমাতে চান সেক্ষেত্রে যেসব জমিতে সবজি বা আলু করা হয় সেসব জমিতে একবার চাষ করে মই দিয়ে আপনি পাটের বীজ বপন করতে পারবেন তাহলে অনেক ভালো ফসল পাবেন। যেদিন আপনি পাটের বীজ বপন করবেন সেদিন আপনি আপনার প্রয়োজনীয় পরিমানে ইউরিয়া, এমপি, জিপসাম, সালফেট স্যার ব্যবহার করতে পারেন। জমিতে শেষ চাষে আপনি মই দিয়ে এটি মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে পারেন।
এরপর আপনি ৪০ দিনের পরে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে পারেন কিন্তু সে ক্ষেত্রে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে মাটিতে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে রস থাকে। আর একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যাতে স্যার গাছের ডোগায় বা পাতায় না লাগে। বীজের পরিমাণ ঘনত্ব ভালো অধিক ফসল পেতে হলে আপনাকে রোগমুক্ত পরিষ্কার বীজ ব্যবহার করতে হবে তাহলে আপনি ভাল ফলন পাবেন।
পাট যখন হাটু সমান হয় তখন এটাকে বাছাই করে বাজারে বিক্রি করা হয় আর পাট গুলোকে ফাকা ফাকা করে দেয়। পাট ঘনো থাকলে পাট ভালো হবে না বড় হতে দেরি হয় আবার পাট চিকন হয়। পাট বীজ রোপন করার পরে থেকে ৩ মাস সময় লাগে বড় হতে। পাট চাষে বেশি ক্ষতি হয় না। পাট চাষ করে আমাদের দেশের কৃষক গুলো লাভবান হয়ে থাকে।
কিভাবে পাটের পরিচর্যা করতে হয়
পাটের ভালো ফলনের জন্য কি করতে হবে আসুন জানি। কিভাবে পাটের পরিচর্যা করবেন কিভাবে পাট চাষ করলে ভালো হবে। পাটের ভালো ফলন পেতে আমাদের যেটা করতে হবে যখন আমরা পাট চাষ করবো সেই সময় অল্প কিছু পরিমান সার দিয়ে দিবো যাতে আমাদের ফলনটা ভালো হয়। ইউরিয়া ৫০০গ্রাম, ডিএপি ৬০০ গ্রাম ও কিছু পরিমান এমপিও দিবো এতে আমাদের পাটে জোর হবে।
তারপরে পাট যখন আপনার হাটু সমান হবে তখন পাট ঘনো থাকলে কিছু ছোট ছোট পাট তুলে ফেলবেন এতে আপনার পাট পাতলা হবে। পাট পাতলা হলে পাট মোটা হতে পারবে জাগ দিয়ে তাট ছিলার সময় পাট ভাংবে না। পাট লাগানোর ২০ দিনের মতো যখন হবে তখন আবার কিছু পরিমান সার দিবেন ইউরিয়া। পাটের বয়স যখন ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ হবে তখন আগাছা নামক বিষ পয়োগ করা লাগবে।
জমিতে সারি থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দ্রুত রাখতে হবে। পাট গজানোর পর ২০ দিনের মধ্যে আপনাকে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। অনেক সময় হয় কি যে পাটের পাতা খেয়ে ফেলে পোকাতে তখন আমরা যেটা করবো পাটের মধ্যে জায়গা জায়গা কিছু লাঠি পুতে দিবো যাতে সেগুলোতে পাখি বসতে পারে। পাখি বসলে সেসব পোকা গুলো খেযে নিবে তখন পাটে পোকা থাকবেনা না।
পাট শাক কতোদিনে হয়
আমাদের বাংলাদেশে প্রায় সব জায়গাতেই পাট চাষ করা হয় । পাট থেকে আমরা অনেক কিছু পেয়ে থাকি। আমরা সবাই কমবেশি পাটের শাক খেতে পছন্দ করি। পাট হচ্ছে বর্ষা কালিন ফসল বেশিরভাগ বর্ষার সময় পাট চাষ করা হয়। পাটের বীজ রোপন করার ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পাটের শাক পাওয়া যায়। পাট যখন হাঁটু সমান হয় তখন পাট থেকে শাক তুলে বাজারে বিক্রি করে।
এতে আমাদের দুইটা উপকার হয়। প্রথমত কিছু টাকা পাওয়া যায় আবার পাটের জন্য ভালো হয়। কারণ পাট যত পাতলা হবে তত পাট ভালো হবে। যারা মনে করেন পাট শাক বিক্রি করবেন তারা এক মাসের মধ্যে যত বড় হবে পাট তুলে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। আমাদের দেশে মূলত পাটকে ২৫ দিন কিংবা ৩০ দিনের মধ্যে তুলে সেটা বাজারে বিক্রি করতে পারে। পাট শাক আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটা খাদ্য।
যাদের অতিরিক্ত রক্তচাপ হয় তাদের এই পাট শাক খাওয়া জরুরী কারণ অতিরিক্ত রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। এছাড়াও কোলেস্টেলর নিয়ন্ত্রন রাখে । যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য এটা খুবই উপকারী একটি শাক। অবশেষে বলা যায় আমরা পাট থেকে অনেক ধরনের জিনিস তৈরি করতে পারি এছাড়া পাটের শাক খেতে পারি। পাটের শাক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
অল্প পানিতে পাট জাগ দেওয়ার পদ্ধতি
অল্প পানিতে কিভাবে পাট জাগ দিবেন সেই বিষয়ে আজকে জানবো। পাট জাগ দেওয়ার জন্য মূলত একটু বেশি পানির প্রয়োজন আমাদের।পাটকে বেশি পানিতে ডুবাতে হয় পানিতে না ডুবালে সেটা পোচবে না আর না পোচলে পাট ছিলা যাবে না।যারা বেশি পানিতে পাট জাগ দিতে পােরন না তারা মাটির গর্তে পলিথিন ব্যবহার করে পাট জাগ দিতে পারবেন।
যাদের গর্ত আছে তারা পলিথিন গর্তে বিছাবেন তার ওপরে পানি দিবেন। পানি দিয়ে পাট গুলো সুন্দরভাবে তার উপরে ফেলে দেবেন। কিছুদিন রাখার পরে ১০ থেকে ১৫ দিন পরে দেখবে পাট পচেঁ গেছে তখন আপনি সেটাকে ছিলে ফেলতে পারবে। এটা পানির তাপমাত্রার আর অণুজীবের উপরে নির্ভর করবে ১৫ দিনের বেশি সময় ও লাগতে পারে।
যারা পানির জন্য পাট জাগ দিতে পারেন না তারা এই ভাবে জাগ দিতে পারবেন। পাট বর্ষাকালে ফসল সেই জন্য আমাদের বেশি সমস্যা হয় না। পাট জাগ দেওয়ার জন্য বেশি পানির দরকার হয় পাটকে শুধু পানিতে ডুবাতে পারলেই কিন্তু এটা পচে যাবে। বর্ষা কালিন ফসল হিসেবে পাট খাল ,বিল, পুকুর যেখানে সেখানে জাগ দেওয়া যায়। অল্পপানিতে জাগ দিতে ছোট গর্তে পলিথিন দিয়ে পানি দিতে হবে তারপরে সেখানে পাট জাগ দেওয়া জাবে।
পাট চাষের স্যার প্রয়োগ পদ্ধতি
পাট চাষের সার পদ্ধতি কিভাবে পাট চাষ করলে ভালো ফলন হবে এটা হয়তো অনেক মানুষ বা কৃষক জানে না। এমন কিছু সার আছে যেগুলো দিলে আপনার পাট চাষের ফলন অনেক বেশি হবে। পাট চাষের প্রধান খাদ্য হচ্ছে নাইট্রোজেন পটাশ ও ফসপেইড। নাইট্রোজেন কম দিলেও এটাতে ফসপেউড ও পটাশ একটু বেশি দিতে হয় কারণ পাট যত বড় হবে তত আপনার পাটের আশ পাতলা হয়ে যাবে।এই জন্য সার বেশি দিলে আপনার পাট মোটা হবে পাটের আশ মোটা হবে।
অন্যান্য সারের থেকে আপনি যত বেশি পটাশ দিবেন তত পাটের চাষের জন্য ভালো হবে। তবে এই সার না দিয়ে যদি দানাদার সার দেন তাহলে আরও বেশি ফলন পাবেন। শোফেলা ১৫ এই সার দিলে পাটের অনেক বেশি ফলন আসবে। ইউরিয়া পটাশ ফসফেট এগুলা দিয়ে যে পরিমাণ পাট উৎপাদন হবে তার থেকে যদি দানাদার সার দেন তাহলে এর থেকে অধিক বেশি ফসল আপনি পেয়ে থাকবেন। তবে আপনার জমির উপর নির্ভর করে সার প্রয়োগ করতে হবে। যারা অনেক বেশি পাট চাষ করে বিগা বিগা আছে তাদের ১০ থেকে ১৫ কেজি ইউরিয়া ১৭ কেজির মতো টিএসপি দিবেন। আপনার ১ বিগা জমিতে এই পরিমান সার লাগবে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় গ্রাহক আপনারা পাট সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনে গেছেন আশা করি এখন নিজেরা পাট চাষ করতে পারবেন। পাট চাষ করে অনেক বেশি লাভবান হতে পারবেন। পাট হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের সোনালী ফসল। এছাড়াও পাটের শাক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী। পাটের শাক রয়েছে ফলিক এসিড এবং ভিটামিন সি যা আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
এছাড়াও পাটের পাতা দিয়ে অনেকে বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি করে খায় । পার্ট বাংলাদেশের বৃহত্তম উত্তরবঙ্গে সবচেয়ে চাষ হয় বেশি। যেমন মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, যশোর এসব জায়গাতে পাটের চাষ অনেক বেশি হয়ে থাকে। পাট সম্পর্কে আমার লেখার যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। এবং আপনাদের তো কোন মন্তব্য থাকে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
Setu24 নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url