শীতকালীন শাক সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

শীতকালীন শাক সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেকের জানা নেই। সিদ্ধ সবজি খাওয়ার উপকারিতা ও রয়েছে অনেক। শাক সবজিতে রয়েছে অধিক পরিমাণে পুষ্টিগুণ এবং খেতেও তা সুস্বাদু। শাকসবজি আমাদের দেহের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় ওজন কমাতে খুবই সহায়ক। শাক সবজিতে  রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন সোডিয়াম পটাশিয়াম যা। আসুন জেনে নিই শাকসবজির উপকারিতা সম্পর্কে

শাক-সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন খনিজ প্রোটিন আয়রন ফরফরাস যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। সুজি খেলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে শাকসবজিতে রয়েছে ভিটামিন যা আমাদের রক্তস্বল্পতা পূরণ করে। মস্তিষ্ক ও ত্বক ভালো রাখে। সবজি খেলে আমাদের রেটিনা ভালো থাকে। শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন যা খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ বসবাস করতে পারে না যেমন ক্যান্সার লিভার আলসার হৃদরোগ ও কোষ্ঠকাঠিন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ইত্যাদি। শাকসবজিতে রয়েছে ক্যালরি শতকরা প্রচুর পরিমাণে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

আমাদের অনেক পরিমাণে সিদ্ধ সবজি খেতে হবে এতে আমাদের শরীর ভালো থাকে, নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ক্যান্সার হৃদরোগ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগ সিদ্ধ সবজি অক্সিডেশন দ্বারা আমাদের দেহে বিভিন্ন রোগের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে। আমরা শুধুমাত্র খাবার স্বাদ ভালো হলেই সেটা খেতে চাই সবাই। শুধু খাবার স্বাদ দেখেই খাওয়া উচিত নয়।

যেভাবে খাবার খেলে খাবার থেকে পুষ্টি পাওয়া যায় সেই ভাবেই খাওয়া উচিত। সিদ্ধ সবজি গবেষণায় বলা হয়েছে জীবাণু মুক্ত থাকে সেটা আরো পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হয়। তবে সবজি বেশি সিদ্ধ করে সবুজ ভাব নষ্ট হয়ে গেলে সেটার পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দেয়। সেজন্য খেয়াল রাখতে হবে যাতে অতিরিক্ত সিদ্ধ না হয়ে যায়। দৈনন্দিন জীবনে সিদ্ধ সবজি আমাদের শরীরের মধ্যে ক্যান্সার হৃদরোগ আরো অনেক ধরণের রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

পাশাপাশি আমাদের শরীর সুস্থ রাখে। সুস্বাদু খাবার তৈরি করার জন্য অনেক ক্ষেত্রে আমরা তেলে ভাজা পদ্ধতি ব্যবহার করি, যেটা থেকে পুষ্টির ক্ষতি হতে পারে। সেদ্ধ সবজি খেলে এতে তেল মশলা ও থাকে না সেজন্য আমাদের শরীরের সুস্থতা বাজায় রাখে। এজন্য চর্বিযুক্ত খাবার কে বিদায় দেন আর সেদ্ধ খাবার বেছে নিন।

আমারা বারোমাসি শাক সবজি খেতে পারি ছয় ঋতুর দেশ হিসেবে এ দেশের মাটিতে ফলে অনেক ধরনের শাক সবজি ফলমূল। আর বাংলাদেশে কৃষির মৌসুম তিনটি কৃষি মৌসুম কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে যেমন ভৌগোলিক অবস্থা জলবায়ু, আবহাওয়া প্রয়োজনের কারনে প্রতিটি মাসে কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়।

১,বৈশাখ মাসের লাক সবজি লালশাক, গিমাকলমি, পাটশাক, ঢেঁড়স, করলাম, চাল কুমড়া, ঝিঙা।

২, জৈষ্ঠ্য মাসের শাকসবজি শজিনা, কাঁকরোল, টমেটো, পটল, ধুন্দুল।

৩, আষাঢ় মাসের শাক সবজি বেগুন, ঢেড়স,টমেটো

৪, শ্রাবন মাসের শাক সবজি পালংশাক, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন

৫, ভাদ্র মাসের শাক সবজি ওলকপি, কুমড়া, বাঁধাকপি, টমেটো,ফুলকপি

৬,আশ্বিন মাসের শাক সবজি শিম, ফুলকপি,লাউ, বাঁধাকপি, বরবটি, ওলকপি, টমেটো

৭, কার্তিক মাসের শাক সবজি আলু, ওলকপি, বাঁধাকপি, ফুলকপি

৮, আগ্রাহায়ন মাসের শাক সবজি মিষ্টি আলু, ফুলকপি, বেগুন, বাঁধাকপি, লাগলাম, টমেটো

আমাদের মানবদেহ কে সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই সবজি খেতে হবে, শীতকালীন শাক সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে অনেক।আমাদের দেশে সারাবছরই শাক সবজি চাষ হয় তবে শীতকালে একটু বেশিই শাক সবজি চাষ হয়। শীতকালীন শাক সবজির মধ্যে ভিটামিন ও মিনারেল থাকে ভিটামিন ও মিনারেল আমাদের মানবদেহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমাদের শরীর কে সুস্থ রাখে আমিষ শর্করা ব্যবহারে সাহায্য করে।

আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য শাক সবজি ফলমূলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সারাবছরই শাক সবজি কমবেশী পাওয়া তবে শীতকালে মৌসুমী ফলমূল শাকসবজি আমাদের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি উপাদান ভিটামিন মিনারেলসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। শাক সবজিতে অনেক পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের ত্বকের বিশেষ ভূমিকা রাখে।

ত্বকের সজীবতা উজ্জ্বল করে। এছাড়াও শাক সবজিতে পানি থাকে তা আমাদের শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে শীতকালীন সবজির যেমন লালশাক, ওলকপি, বাঁধাকপি, ধনিয়া পাতা টমেটো, মটরশুটি,মুলা শআকগআম ইত্যাদি শীতকালিন সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, এসিড, বিটা ক্যারোটিন আয়রন, ইত্যাদি ফুলকপি আর বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন সি ভিটামিন এ ফুলকপিতে কিডনির পাথর গলাতে সাহায্য করে।

ফুলকপির সালফোরাফেন রক্ত চাপ কমায় ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় টমেটো ভিটামিন সি জাতীয় একটি সবজি ফসফরাস মিলারের ভিটামিন ডি আর প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে। শাক সবজিতে ভিটামিন মিনারেল ফাইবার এগুলোর কোনো অভাব নেই আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই বেশি বেশি শাক সবজি খেতে হবে এর কোনো বিকল্প নেই। কারন শীতকালীন শাক সবজির পুষ্টিগুণ ও বলে শেষ করা যাবে না।

সব চেয়ে উপকারী শাক সবজির মধ্যে রয়েছে পালং শাক, গাজর, ফুলকপি, ব্রকলি,মুলা, সবুজ শাক, কুমড়া ইত্যাদি আরও অনেক কিছু যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য আমাদের খাওয়া হয় তবে প্রতিটি শাক সবজির নানা রকমের কাজে সাহায্য করে আমাদের দেহে যেমন ফুলকপি ফুলকপি আমাদের কিডনীর পাথর গলাতে সাহায্য করে ফুলকপির শুধু দেখতেই সৌন্দর্য নয় এর পুষ্টিগুণ ও ভরপুর।

মুলা মুলা সাদা মুলাতে ভিটামিন সি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ থাকে।এটিতে ক্যালোরি অনেক রয়েছে মুলার পুষ্টি অসুস্থার সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে। মুলা দুই ভাবেই খাওয়া যায় রান্না করে আবার কাঁচা ও খাওয়া যায়।

ব্রকলি শীতকালীন সবজির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্রকলি তা রোগ প্রতিরোধ বাড়ায়। এটিতে ভিটামিন ফাইবারের মতো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে তা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। ব্রকলি রান্না করে খাওয়া যায় আবার সেদ্ধ ও খাওয়া যায়।

গাজর গাজরে ভিটামিন সি রয়েছে গাজর আমরা কাঁচা খেতে পারি আবার রান্না করে সবজি হিসেবে ও খেতে পারি। গাজর খেলে চোখের জ্যোতি বাড়ে । গাজর একটি রোগ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী খাবার।

ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের মনও আমরা টক জাতীয় খাবার সম্পর্কে জানি লেবু, আমলকী , মালটা, কমলা, আনারস, ইত্যাদি ফলে হয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। আমাদের দেহের ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে চোখের সমস্যা চোখের লেন্সে মস্তিষ্কের রক্ষা বা রক্তের ভিটামিন সি এর ভূমিকা পালন করে। আর এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন সি শাকসবজি ও ফলমূল এ পাওয়া যায়। এরপরে কোনো কাটা ছেঁড়া পর ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত এতে করে ক্ষত স্থান খুব তাড়াতাড়ি শুকাই।

অনেক মানুষ খাদ্য আর পুষ্টি কে একই মনে করেন আসলেও ধারনাটা ভুল। সুস্থ থাকার জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতি হবে। আর এইসব পুষ্টি শরীরের রোখ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শাক সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ভিটামিন ডি মিলারেল খনিজ পদার্থ সহ আরো নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান। সবজি আমাদের খাবার রুচি বাড়ায় হজমশক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকারী।

পালং শাক সাধারণত আমরা শীত কালেই পেয়ে থাকি এর এই শাক কম বেশি সবারই প্রিয় খাবার এই শাক বিভিন্ন ভাবেই খাওয়া যায় অনেক মানুষ এটা ঝোল করে স্যুপ বানিয়ে খায় আবার এটা ভাজি করে খাওয়া যায়। পালং শাক রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ এটি ভুল পদ্ধতিতে রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ কমে যায় সেজন্য সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করতে হবে। অতিরিক্ত তাম মাত্রায় পালং শাক রান্না করলে পুষ্টিগুণ কমে যায় সেজন্য তাপমাত্রা কমিয়ে রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। এই শাকের বীজের অনেক উপকারিতা আছে । পালং শাক চোখের জন্য ও অনেক ভালো চোখে জ্যোতি বাড়াই।

প্রিয় গ্রাহক শীতকালীন শাকসবজির পুষ্টিগুন ও উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানা ছিল কি। যদি শীতকালীন সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে এই পোস্ট আপনাদের ভালো লাগে তবে আজ থেকে শাকসবজি খাওয়া শুরু করে দিন।সবুজ শাকসবজি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী আমাদের চোখ চুল সবকিছুর জন্য বেশ উপকারী সবুজ শাকসবজি খেলে আমরা বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা থেকে বাঁচতে পারি। নিজেই প্রতিদিন শাকসবজি খান ও আপনার আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে শেয়ার করে দিন এবং তাদেরকে প্রতিদিন শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দিন।